Monday, December 18, 2017

ধ্বংস হলি না, বেঁচে গেলি এ যাত্রা ...

জামার কথা - "ছেড়ে দে শয়তান। ছেড়ে দে আমায়! তুই শুধু আমার শরীরই পাবি, মন পাবি না!"
আমার কথা - "ছাড়বো বলে তো ধরিনি সুন্দরী। তোমায় এখন আমি উমমম জড়িয়ে....উফফ, কি গরম তুমি!"
জামার কথা - "ঘরে অন্য জামা নেই? এক আমায় পেলে তুমি আমার কোন ইজ্জত রাখোনা। কি গরম, কি শীত... কি ভাবো তুমি! আমার..."



(অতঃপর তার ফুঁপিয়ে কান্নার ভঙ্গীমা ও আমার প্রেম চোপড়া সম মুভমেন্টে প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়া.... তারপরের ক্লাইম্যাক্সটা পড়ে সময় মত আসবে...)

***
বছর ছয়েক আগে তাকে প্রথম দেখি। কোন এক সুন্দরী ম্যানিকুইনের কাষ্ঠশরীরে জড়িয়ে। কাঠ-কু-রানীর পায়ের কাছে আরও কিছু স্যাম্পল, যথাক্রমে ফড়িং, জিরাফ, হাতি ও তিমিদের জন্য রাখা। প্রাইস ট্যাগ বলছিল, একটা নিলে, সেম দামে আর একটা ফ্রি। এ অফার ত্যাগ করার প্রশ্নই ওঠে না কারন তখন আমার সবে ফড়িং থেকে হাতীতে ট্রান্সফর্মেশন চলছে, আর আমার দিব্যদৃষ্টি বলছে জি.এস.টি এসে যাবে। একটা নীল ও একটা সাদা ( ওভাবে তাকাচ্ছো কেন? ) কপাৎ পাকরাও করে, কড়কড়ে দেড়শ টাকা কার্ডে পেমেন্ট করে ( কি হচ্ছে টা কি!! ), দারোয়ানের সেলামে একটা বিল ক্লিন্টন-মার্কা হাসি ডোনেট করে চলে এলাম। পাক্কা একবছর সোহাগের hug করেছি দুজনকেই। মাঝে মাঝে নতুন খোলা সিরাজের বিরিয়ানী বলো বা এর ওর ঘরে দুষ্টু পার্টি, সবেতে নিয়ে গেছি। তবে আজ কিন্তু শুধু সুয়োরানীর গল্প বলবো। সাদা রং, গায়ে কমলা আর নীল ভেলভেটের পাতলা আস্তর ( যা কিনা আগামী তিনটে ধোলাইয়ের পরেই অদৃশ্য হয়ে যেতে চলেছে ) বউটির বিউটি বহুগুনে বাড়িয়ে দিয়েছে। আর ভাইটাল স্ট্যাট!! ( পর-স্ত্রী-কাতর হতে না দেওয়ার জন্য জনস্বার্থে প্রচারিত নয়) 


এক বছর পর, অনেক সখীপনা হয়েছে বলে, তাকে ঘরের কাজে লাগিয়ে দিতে গেলাম। সে আমার দিকে কেমন একটা ললিতা পাওয়ারের নজরে তাকালো। আমি খুব ভীতু মানুষ। তাকে বাক্সে পুরে দুয়োরানী নীল জামাকে কাজে লাগিয়ে দিলাম। সুন্দরীকে মাঝে মাঝে বাড়িতে লোক আসলে বের করতাম। কিন্তু তাও সইলো না হতভাগীর। বাক্সের কোণে পড়ে থেকে কাছে টানতো। অনেকদিন দেখেও না দেখার ভান করে থাকতাম। হারেমখানায় অন্য সুন্দরীদের সাথে ওর প্রচ্ছন্ন হিংসা টের পেতাম আমি। হয়তো কারো খোঁজে গেছি, তার রঙও সাদা। ইনি ঠিক সবার আগে এসে লাভ পোশনের ( পড়ো ন্যাপথালিনের ) একটা চার্ম ছড়িয়ে দিতেন। তবে বিশ্বামিত্রও কুপোকাত হয়েছিলেন মেনকার ছলনায়; আমি তো কোন ছাড়। মাস ছয়েক পর, হারেমের মহল অন্য সুন্দরীকে কনফার্ম করে সুয়োরানীকে ছিনিয়ে এনে ফেললাম, ইসে আলনায়। সেদিন থেকে আজ পাঁচ বছর সে আমার পাটরাণী। 


প্রথম প্রথম যতদিন উজালার বিজ্ঞাপন দিত, আক্ষরিক অর্থেই তাকে পাট পাট করে গুছিয়ে রাখতাম। কিন্তু তারও যৌবন আমার চরম নিষ্পেষনে একদিন অস্তমিত হল। ভাইটাল স্ট্যাটেস্টিক পৌঁছে গেল ৩৪-৩৪-৩৪ এ ( জানি, আর কেউ নজর দেবে না )। এখানে হলুদের আঁচড়, ওখানে স্যাভলনের কামড়; লোকের সামনে বের করাটাই লজ্জার। বাহাত্তুরে বুড়ির কিন্তু ঠাট কমেনি তাতেও। এখনো প্রতিটি সুতো অটুট প্রতি মাসে একবার করে ধোলাই খাওয়া সত্ত্বেও। না তাকে তার দাগ ছেড়ে যায়, না আমি। চাঁদেরও কলঙ্ক আছে, আমার সুয়োরাণীরও। তবু তাকে দেখি আর জর্জরিত করি... এই পাপী সাজাহান ঝাঁপিয়ে পড়ে তার ওপর আরও একবার। 


কিন্তু আজ ঘর্মাক্ত কলেবরে জিমখানা ( যেখানে আমি দুসপ্তাহে একবার যাই, আর পুরো মাসে বার আষ্টেক বিরিয়ানীসম খাদ্য খাই ) থেকে ফিরে দেখি এক কোনে দলা পাকিয়ে পড়ে আছে বিছানার ওপর। মন কেমন করে উঠলো। ভাবলাম থাক। অনেক তো হল। এবার ছুটি দি ওকে। কিন্তু না, ও শুনলো না। আমি পরিস্কার জানি, ও চাইলো আমি ওর কাছে যাই; জাপটে ধরে ঘাম মুছি; তাই পাক্কা হেমা মালিনীর স্বরে বলে উঠলো... "ছেড়ে দে শয়তান। ছেড়ে দে আমায়! তুই শুধু আমার শরীরই পাবি, মন পাবি না!" এগুলো ডাহা নাটক। ও ঠিক জানে, ও আমায় না উস্কালে আমি আমার হারেমে চলে যাব, বেছে আনবো আর একজনকে, আর ওর মহলে ( হ্যাঁ রে বাবা আলনায় ) টাঙিয়ে দেব। বুঝিনা ঠিক কী চায় ও। অন্যদের বাঁচাতে নাকি আমাকে নিজের সাথে মজিয়ে রাখতে। পারলাম না ওর খোঁচা উপেক্ষা করতে। কপালের ঘামটা মুছে বললাম "ছাড়বো বলে তো ধরিনি সুন্দরী। তোমায় এখন আমি উমমম জড়িয়ে....উফফ, কি গরম তুমি!" ন্যাকামীতে সাড়ে নিরানব্বই পাওয়া সুয়োরাণী এটারই অপেক্ষায় ছিল। আড়মোড়া ভাঙতে গিয়েও ভাঙলো না, স্পষ্ট দেখলাম। হিসহিসিয়ে বলে উঠলো "ঘরে অন্য জামা নেই? এক আমায় পেলে তুমি আমার কোন ইজ্জত রাখোনা। কি গরম, কি শীত... কি ভাবো তুমি! আমার..."। কথা শেষ করতে দিলাম না, চেপে ধরলাম ওর গলা পরফিরিয়ার প্রেমিকের মত; ঘামে মাখামাখি করে দিলাম ওকে। শুয়ে রইলাম অনেক্ষণ একাত্ম হয়ে। হঠাৎ খেয়াল হল, বালতিতে গরম জল ভরতে দেওয়া আছে। আস্তে করে ওর ক্লান্ত শরীরটা জলে ভাসিয়ে দিলাম। কিছু বুদবুদ উঠে এলো ও বালতির নীচে ধাক্কা খেতে; কিছু গানের কলিও বুদবুদের মত আমার গলায় ভেসে উঠলো। ম্লান হেসে ওর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম, "ধ্বংস হলি না, বেঁচে গেলি এ যাত্রা......"

No comments:

Post a Comment