আমাদের শঙ্কর ( আমি এখানে অধিকারীবাবু বলে ডাকবো ) আর ব্রান স্টার্কের মধ্যে দারুণ মিল আছে। লক্ষ্য করেছো কেউ? তারপর ধরো অ্যানের বাবা আর নেড স্টার্ক এবং দিনারীসের মধ্যে? অথবা আরিয়া ও শ্বেতলানা (মানে আন্না )র মধ্যে? করোনি না? জানি করবে না। তোমরা কিছুতেই সিরিয়াসলি কিছু নাও না। কত আর ধরে ধরে বোঝাবো?
কি বলছিলাম? শঙ্কর আর ব্রান স্টার্কের মধ্যে মিল আছে। বিশ্বাস হলো না? লেট মি এক্সপ্লেইন।
ক) দুইজনেই যা যা স্বপ্ন দেখে, সেগুলো মিলে যায়।
খ) দুইজনেই কারো না কারো ঘাড়ে ভর দিয়ে চলে।
গ) দুইজনেই পিছনপাকা ও জ্ঞানপাপী।
ও কাকীমা চটে উঠছো কেন? তোমাদের দেবতার সাথে ম্লেচ্ছ দাঁড়কাকের তুলনা করছি বলে? কিন্তু তুমি তো স্টার্কের বাচ্চাকে চেনোই না। সুতরাং সিরিয়াল দেখগে যাও...
তবে ওপরের প্রতিটা কথা সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা। জল মেশানো নেই। অধিকারীবাবু প্রথম সিনেই খেয়েছে রাম-তাড়া বাই ব্রেজিলের কালো বাঘ। ছবিটা এরকম...
এখন প্রশ্ন অধিকারীবাবু ও কেলে মানিক দুটোই খাদের কিনারায় কি করতে গেছিল! মানে নরমালি লোকে কোথাও থেকে দৌড়ে এসে কোথাও একটা যায়। এখানে দুজনেই কমলের জন্য ডোডো সিরিংএর মত খাদের ধারে অপেক্ষা করছিল। পিপ্ (কমলবাবু নিশ্চই একশান বলেছিলেন) বলতেই দে দৌড়। ওহো অন্য থিওরী কপচাচ্ছি আসল কথা ছেড়ে। হ্যাঁ যা বলছিলাম। দুজনেই যা স্বপ্ন দেখে সব মিলে যায়। অধিকারীবাবু প্রথম গল্পে হাতী দেখেছে...পেয়েছে। এবারে জাগুয়ার আর কেইম্যান দেখেছে; সকালে উঠে নাচতে নাচতে কমল কাকুকে বলেছে। কমলকাকুও হিড়হিড় করে টানতে টানতে আমাজনে নিয়ে গেছে। শেষে অধিকারীবাবুর নাকের জলে চোখের জলে অবস্থা দেখে বলেছে, ঠিক আছে তোমায় কিছু করতে হবে না, শুধু দাঁত কিড়মিড় করবে, বাকী হামি মেনেজ করে লিবে। তা ম্যানেজ উনি করেছেন ও দায়িত্ব নিয়ে ছড়িয়েছেন। সুতরাং অধিকারীবাবুর স্বপ্ন সফল।
পয়েন্ট দুই। ব্রান স্টার্ক এর যেমন হোডর, অধিকারীবাবুর তেমনি শ্বেতলানা। নাহলে গ্রামে তো গুরুমশাই হয়ে বসেছিল। সে একটাই জিনিস পড়ায়। আফ্রিকা। ওয়ার্ল্ড ম্যাপে একটা জায়গাই পয়েন্ট আউট করে। আফ্রিকা। পড়াতে পড়াতে একটা বাচ্চাকে একটাই প্রশ্ন করে, যার উত্তর আফ্রিকা। তা এমতাবস্থায় আনা এসে হাজির। অধিকারীবাবুর মাকে প্রায় শাশুড়ী বানিয়ে, হামি টোমাডের প্যাঁডানী ডিবে স্টাইলে বাংলার মা-বোন এক করে, দেবদুলালকে ঘাড়ে করে ডাইরেক্ট কাসেল ব্রাজিল। তা অধিকারীবাবুর মা তো ছাড়বেন না। এই সময় না কমলঠাকুর একটা মিউজিক পাঞ্চ করেছেন। এই মিউজিক হিন্দীমুভি বর্ডার বলো বা স্টার ওয়ার্সের জেডাইদের যুদ্ধযাত্রা, সব জায়গায় একদম পাররররররফেক্ট। অধিকারীবাবুর সাজুগুজু দেখলে কে বলবে উনি কার্গিল যাচ্ছেন না আমাজন। আর লাবনী সরকারের স্লো মোশনে গাল কাঁপানো যে মিস করেছে, তার ২০০ টাকাই বৃথা। পাক্কা ৫৫ সেকেন্ড ধরে গাল কাঁপানো আমায় দুটো জিনিস মনে করিয়ে দিয়েছে। এক "আপ মুঝে আচ্ছে লগনে লগে"র লাস্ট সিনে হৃতিকের গাল কাঁপাতে কাঁপাতে উঠে দাঁড়ানো। দুই, ইসে মানে, হাগিসের অ্যাডে বাচ্চাটার পাছা নাড়ানো।
পয়েন্ট তিন। ব্রান স্টার্ক আর অধিকারীবাবু দুটোই যাচ্ছেতাই রকমের বেশী জানে। অধিকারীবাবু তো আনা আসা থেকেই তার ইংরেজী আর মার-ডালা গোত্রীয় বাংলার বাংলা তর্জমা করে বলে বলে দিচ্ছিল, থাকতে না পেরে পরে নিজের বলা ইংরেজীর বাংলাও করে দিতে শুরু করলো। একদিকে বলবো ভালোই হয়েছে। নইলে আমি তো মিশরে চলে যাচ্ছিলাম আর একটু হলেই। একবার কিসব হাবিজাবি ফিলোজফি ঝেড়ে শেষে বলে "থুত"। আমি তো ঝিমোচ্ছিলাম। চমকে উঠেছি। আমাজনে কি ফ্যারাও থুতমোসিসের স্কেলেটন পাওয়া গেল নাকি। পরে বলে ওটার হল গিয়ে "সত্যি"কারের ট্রুথ। আমি আবার ঝিমোতে লাগলাম।
আরও অনেক পয়েন্ট আছে, যেমন দুইজনেই বাবা নেই, দুইজনেই গাছে গায়ে ঠেস দিয়ে ঘুমোয়; কিন্তু এসব বললে লোকে আমার রিভিউ পড়ে লাইক দেবে না। তোমরা ভাববে আমি তো ফ্রাস্ট্রেশনেই মরে গেছি (অত খায় না বাওয়া, আমি বিষমাল )!
আরিয়া আর অ্যানার মধ্যে মিল আছে বলার জন্য যারা এই মুহুর্তে আামার শত্রু হয়ে গেল, তাদের জন্য এক বালতি অভিনন্দন। বাকীটা নিজের খরচে...
আরিয়াকে আমার যতটা ভালো লাগে, অ্যানাকে ঠিক ততটাই খারাপ লেগেছে। দেখতে মিষ্টি আর বিদেশী হয়েও সন্ধ্যারাণীর সাথে পাল্লা দিয়ে কাঁদতে পারে, এর বেশী একটা পয়েন্টও দেওয়া যাবে না। একটা লাইনে কোথায় যতিচিহ্ন বসবে সেটাই জানে না। "এখানে প্রস্রাব করিবেন না করিলে ৫০ টাকা জরিমানা" ধার্য করাই যেতে পারতো। মিলটা কোথায়। দুজনেই বাবা অন্ত প্রাণ। মৃত্যুর প্রতিশোধে নো-ওয়ান বা অধিকারীবাবুকে ইনভল্ভ করানো। দুজনেই একা একা অনেকদূর পাড়ি দেওয়া ইত্যাদি। তবে এই মেয়ে আরও এক কাঠি সরেস। ইটালীয় পিতার সাথে বাংলা আর ইংরেজী কনভারসেশনের সাহস আরিয়াও দেখাতো না। ক্যানোতে বিষফল খেয়ে ঘুমানোর সময়, বাকী নৌকায় যথেষ্ট জায়গা থাকা সত্ত্বেও অধিকারীবাবুর বুকের ওপর আড়ামসে শুয়ে পড়লো। আর বাড়ী থেকে বহুদূরে আমাজনের বুকে কোন নদীর কি নাম পটাপট মুখস্ত বলে দিল। বোঝাই গেল না, গতবারে অভিযানে কে এসেছিল! আর এল ডোরাডো দেখার পর উত্তেজনার এক্সপ্রেশন! হরিবোল (ইংরেজীতে উচ্চারণ করো)!
আর রইল বাকী মার্কো পোলো থুড়ি ফ্লোরিয়ান। নেড স্টার্কের মতই বুদ্ধিমান। আর দিনারীসের মত উচ্চাকাঙ্খী ও এক কথার মানুষ। এল ডোরাডো আবিষ্কার করতে যাচ্ছি, বুঝলে? ওরে কেউ একে একটা মাইক আর এক পিপে রাম এনে দে। সব্বাইকে বলে চলেছে। কোন রাখঢাক নেই। নড়বড়ে ঝুলন্ত সেতুটা মহা জালি। মার্কোমশাই এখানে কালিদাসের উত্তরসূরী। শিকড়বাকড় দিয়ে বানানো হলেই যে তোর ওপর তিনটে দামড়া লোক তিনটে ঘোড়া সমেত উঠতে পারবে না, আগে বলতে পারিস নি? মাঝরাস্তায় পটাং। আমার বোধহয় চোখ খারাপ। আমি যেন সেতুতে বেশকিছু পিভট দেখলাম! ও দেখিনি? আচ্ছা।
দিনারীসের এক কথা নিয়ে কথা হচ্ছিল না? (আমাদের সবার হাঁটু ব্যাথা!) মার্কোর ও এক কথা। ওহ বয়, মাই বয়, ইয়েস বয়, নো বয়, ইউ বয়.... খড়বায়ু বয় বেগে গানটা আবহসঙ্গীতে আপসে ঢুকে যেত। খেঁকুড়ে লোক। আমাদের এক প্রতিবেশী আছে। তাদের আনন্দ, রাগ, ঝগড়া কিছুতেই আলাদা করে বোঝা যায় না; সবেতেই চিল্লায়। ওই বাড়ী থেকে ভূমিকম্পপপপপপপ, খাবার পোড়াআআআআআআ আর ঘুম পেয়েছেএএএএএএএএ সব একই ফ্রিকোয়েন্সিতে বিকিরিত হয়। এনার এক্সপ্রেশনও তাই। সবেতেই মুখখানা বুলডগের মত করে রাখে। ইনি আবার লিও রোজাসের কাছ থেকে ওনার বাঁশীটা ধার নিয়ে লাস্ট অফ দ্যা মোহিকান'সের থিম না আভে মারিয়ার প্রথম লাইন টা বাজান। মরণ (এটাও ইংরেজীতে পড়তে হবে)!
এত গেল লোকগুলোর কথা। কিন্তু লেক নেসের দানো আর অ্যানাকোন্ডার মধ্যে মিলটা? জলের মধ্যে হুবহু একই ভাবে কিলবিল করে। গেছে মেয়েটা জল আনতে, তার পিছনেও কাঠি করে দিল। অধিকারীবাবু তো দৌড়ে এলেন। ভয়ে হিসি করে দেবার জোগাড় সাপবাবাজীর। আলোর বেগে মার্কোমশাই এর কেবিনে পালালো। আমি তো ভেবেছিলাম বোধহয় আবার ঘুমিয়ে পড়েছি। নাঃ। পরে বুঝলাম ওটা হাইব্রিড মাল। কমলবাবুর ডিএনএ আছে। আর বাকীটা অ্যানাকোন্ডা পার্ট ওয়ানের সাপটার। মার্কোকে খেল, আবার বমি করে দিল। বুঝলাম না কারনটা কি! আমি তিনটে কারন ভেবে বের করেছি। দেখতো মেলে কিনা।
ক) সাপটার পেট খারাপ
খ) অধিকারীবাবুকে দেখেই বিষম খেয়েছে
গ) মার্কোমশাই এর গায়ে বিকট গন্ধ
বাকী গ্রাফিক্স ও অ্যানিমেশন, একই দৃশ্যের বারবার অবতাড়না, পাটভাঙা জামাকাপড় ও দেবের খেতে বসার সময় মাসল বাগানো গেঞ্জি (হ্যাঁ বাছা, ওটার মেটেরিয়াল রিয়াল গেঞ্জি ই ), মেকআপ আর্টিষ্ট (যা বুঝলাম মার্কোই দুদিক সামলায়। মরে যাবার পর সময় পেয়ে ছেলে মেয়েগুলোকে সাজিয়েছে ), অল্প স্বল্প স্প্যানিশ জানা আনার কি সুন্দর স্প্যানিশ থেকে ইংরেজীতে কবিতার মত ছন্দে রিডল বানিয়ে দেওয়া, ভার্জিন অফ সান (আরেক গুলতাপ্পি), অধিকারীবাবুকে আনার দেওয়া সোনার ব্লক (এটা সোনার টুকরো? ফাজলামির একটা সীমা মেনটেইন করা উচিৎ) , শেষ দৃশ্যে ক্যাফেটেরিয়ায় অধিকারীবাবুর হাতে ও মুখে (থুতনিতে) লেগে থাকা সোনালী অভ্র (পরের বার দেখতে ভুলো না ) র কথা তুললে রাত ভোর হয়ে যাবে। তাই ওগুলো আপাততঃ বাদ। শুধু একটা জিনিস না বলে শেষ করলে মহাপাতক হব। ব্রাজিলে নামার পর আনার পোষাক টা একটু চেনা লাগছিল কি? ওটা টাইটানিকে রোজ ওঠার পর ছেড়ে রেখে গেছিল। কমলকাকু গুপি করে নিরমা দিয়ে কেচে গোলাপী রঙ লাগিয়ে আনাকে পরিয়েছেন। আমার দুপুরের কফিটা মিস হয়ে গেল, ধ্যাৎ!!!
No comments:
Post a Comment